সিল করা হচ্ছে তারা মায়ের বোন মা মৌলিক্ষা দেবীর বাড়ি মুলুটি গ্রামের ঢোকার রাস্তা

 কালীপুজোর রাতে সিল করে দেওয়া হবে রামপুরহাট লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মুলুটি গ্রাম ঢোকার সমস্ত রাস্তা। জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামে মা মৌলিক্ষা দেবীকে তারামায়ের ছোট বোন রূপে পুজো করা হয়।
 দেহহীন দেবী এখানে ত্রিনয়নী। প্রত্যেক বছর কালীপুজোর নিশিরাতে দুই রাজ্যের হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয় মুলুটির দেবীমস্তক নানকার রাজবাড়ি চত্বরে। করোনা পরিস্থিতির জেরে এবার সংক্রমণ রুখতে সেই ভিড় আটকানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এমনকী এই পুজোর মূল আকর্ষণ লক্ষাধিক টাকার আতস বাজি প্রদর্শনও বার বন্ধ থাকছে। পুজো উপলক্ষে বসবে না মেলাও। ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার ওসি সঞ্জয় সুমন বলেন, এবার পরিস্থিতি আলাদা। পুজো ঘিরে ভিড় এড়ানোর জন্য মন্দির কমিটিকে বলা হয়েছে। আতস বাজি পোড়ানো বা মেলা সবই এবার করোনার জেরে বন্ধ রাখা হচ্ছে। খুব সাধারণভাবে পুজো করার জন্য বলা হয়েছে। মায়ের মুখমণ্ডল অষ্টম শতাব্দীর বৌদ্ধতান্ত্রিক শৈলীর আদলে। আগে এই অঞ্চল শাসন করতেন বিষ্ণুপুরের মল্লরাজারা। সেই কারণেই এই গ্রামের নাম হয় মুলুটি। জনশ্রুতি আছে, পরবর্তীকালে নানকারের তিন রাজার বংশধর রাজচন্দ্র রায়, রামচন্দ্র ও মহাদেবচন্দ্র এখানে রাজত্ব করেছেন। মল্লারপুরের শাসক কামাল খাঁর অতর্কিত হামলায় রাজচন্দ্র মারা যাওয়ার পর তাঁর বড় ছেলে রাখরচন্দ্র মুলুটির গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নেন। সেখানে ভগ্নপ্রায় এই প্রাচীন মন্দিরে পাথরের দেবীমূর্তি খুঁজে পান। তারপর এখানেই তিনি নগর পত্তন করেন। সেই 
থেকে রাজবাড়ির বংশধররা আজও মায়ের পুজো চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগ মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। এখন এই রাজবাড়ি আট শরিকে বিভক্ত। তাঁরা সকলেই পৃথক পুজো করেন। প্রতিবারই পুজোর দিন মন্দির লাগোয়া মাঠে কয়েক লক্ষ টাকার আতসবাজি পোড়ানো হয়। তারপর আটকালীর পুজো শুরু হয়। গ্রাম ঘুরে ঘুরে পুজো দেখতে শুধু ঝাড়খণ্ড নয়, বীরভূমের বহু গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু এবার করোনার আবহে মন্দির কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর সেই সব আয়োজন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ঝাড়খণ্ড প্রশাসন। মন্দিরের সেবাইত পুলক চট্টোপাধ্যায় বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। জনসমাগমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বাইরের ভক্তদের এবার গ্রামে ঢোকা বারণ। কালীপুজোর দিন গ্রামে ঢোকার তিনটি রাস্তাই সিল করে দেওয়া হবে। তবে আড়ম্বর না হলেও পুজোর নিয়মনীতির কোনও পরিবর্তন করা হচ্ছে না। মন্দিরের প্রবীণ সেবাইত কানাইলাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাজা রাখরচন্দ্রের বাড়ির
 পুজোতে মোষ বলি বন্ধ হয়ে গেলেও বাকি শরিকদের পুজোয় এখনও মোষ ও মেষ বলি হয়। সেই প্রথার কোনও বদল হচ্ছে না। তিনি বলেন, গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ১০৮টি শিবমন্দির রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ৩২টি মন্দির বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সরকার এগিয়ে না এলে একদিন বাকি মন্দিরও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সরকার চেষ্টা করলে এই গ্রামকে ঘিরে ভালো পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ