বাঙালি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে ফ্রিল্যান্সিং কাজের প্রতি ঝোঁক, আর তাদের ঘরে বসে সহজেই আয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট।
১০টা-৫ টার বাধা ডিউটি নেই, অফিস পলিটিক্সের ঝুট ঝামেলা নেই, বসের রক্তচক্ষু নেই নিজের ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করেই আয় করা যায় দিব্যি। রয়েছে পার্ট-টাইম জবের সুযোগও। কলেজের পাশাপাশিই নিজের সময় সুযোগ মত কাজ করে জুটে যায় পকেট-মানিটুকু।
দিনে কতক্ষণ কাজ করবেন বা সপ্তাহে কদিন সেই সিদ্ধান্ত পুরোটাই আপনার নিজের। ঠিক কোন কাজটা করতে চান সেটাও ঠিক করবেন আপনিই।
বিদেশে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং কেরিয়ার। পরিসংখ্যান বলছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মী সংখ্যার ৩৬ শতাংশ ফ্রিল্যান্স কাজের সঙ্গে যুক্ত। অনলাইন জব করেই কলেজের মাইনে জোগাড় করে ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ।
ভারতেও ক্রমেই চাহিদা বাড়ছে ফ্রিল্যান্সারের। বিদেশী সংস্থারাও হামেশাই ভারতীয়দের নিয়োগ করছে বিভিন্ন অনলাইন জবে।
তবে উপযুক্ত যোগ্যতা থাকার পরও অনেক সময়ই সঠিক কাজের সুলুক সন্ধান পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে, ইন্টারনেটে হন্যে হয়ে ঘুরেও খুঁজে পাওয়া যায়না পছন্দ মতো কাজটি। আপনার এই সমস্যা সমাধান করতেই আমরা এখানে ভারতের বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটের একটা তালিকা তৈরি করেছি।
এই ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে আপনি সহজেই পেতে পারেন আপনার পছন্দ মতো কাজ, এবং নিশ্চিত থাকবে আয়ও। এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোই আপনার দক্ষতার সঙ্গে মিলিয়ে কাজ খুঁজে দেবে আপনাকে।
এর মধ্যে কয়েকটি ওয়েবসাইট কাজ করে ভারতেই, বাকিগুলো আন্তর্জাতিক, তবে প্রত্যেকটিই ভারত থেকে ফ্রিল্যান্সার নিয়োগে আগ্রহী। কাজের পর যাতে টাকা মার না যায় সেটাও নিশ্চিত করে এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটগুলো।
ভারতের কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং সাইট
ইউথ ফর ওয়ার্ক (Youth4work)
অনলাইনে কর্মী নিয়োগের একটা বড় সমস্যা প্রার্থীর দক্ষতা যাচাই। প্রার্থীর অনলাইন প্রোফাইল থেকে অনেক সময়েই তার দক্ষতার সঠিক আন্দাজ পাওয়া যায় না। সেই সমস্যার সমাধানে কিছু অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছে ইউথ ফর ওয়ার্ক।
বিভিন্ন দক্ষতাভিত্তিক এই পরীক্ষা দিয়ে আপনি সহজেই প্রমাণ করতে পারবেন নিজের যোগ্যতা, পরীক্ষার ফলাফল দেখা যাবে আপনার প্রোফাইলে। নিয়োগের সময়ে পরীক্ষার এই ফল দেখেই নিয়োগকারী সংস্থা বুঝে নিতে পারবে আপনার দক্ষতার স্তর।
খরচঃ এই সাইটে নথিভুক্তির জন্য কোনও টাকা দিতে হয় না ফ্রিল্যান্সারকে, অর্থাত্ বিনা বিনিয়োগেই আপনি পা রাখতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে।
ওয়ার্কএনহায়ার (WorknHire)
ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট ওয়ার্কএনহায়ার। আইটি অ্যান্ড প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ফিন্যান্স, সেলস্ অ্যান্ড মার্কেটিং ও ডেটা এন্ট্রি সহ বিবিধ কাজের সুযোগ পাওয়া সম্ভব এই ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মে।
ফ্রিল্যান্সার ও ফ্রিল্যান্স মার্কেটের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করে ওয়ার্কএনহায়ার। কোনও বিনিয়োগ ছাড়াই প্রোফাইল খোলা যায় সহজেই। ভারতের অভিজ্ঞ অথবা নতুন সব ফ্রিল্যান্সাররাই পেতে পারেন কাজের সুযোগ।
ফ্রিল্যান্স কেরিয়ার শুরু করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এই ওয়েবসাইট। পাশাপাশিই রয়েছে ভার্চুয়াল ডেস্কটপ, যেখানে আপনি সহজেই গুছিয়ে রাখতে পারেন প্রজেক্টের কাজ।
খরচঃ মোট ইনভয়েসের ৫.৬১৮শতাংশ নেয় ওয়ার্কএনহায়ার। অর্থাত্ একটি প্রজেক্টে মোট যে টাকা আপনি পাবেন তার ৫.৬১৮ শতাংশ পরিষেবা মূল্য হিসেবে নেবে ওয়ার্কএনহায়ার।
ফ্রিল্যান্স ইন্ডিয়া (Freelance India)
ভারতের প্রথম ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটগুলোর একটি ফ্রিল্যান্স ইন্ডিয়া। ২০০২ সাল থেকে ভারতের ফ্রিল্যান্স মার্কেটে কাজ করছে এই ওয়েবসাইট। নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময় প্রোফাইল খোলার পাশাপাশিই রয়েছে ফ্রি মেম্বারশিপের সুযোগও।
এই সাইটের নেভিগেশন বেশ জটিল হলেও কাজ পাওয়া যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে, পার্সোনালাইসড ওয়েব পেজের মাধ্যমে তৈরি করা যায় গুগল্ লিস্টিংও। অ্যাকাউন্টিং থেকে ফটোগ্রাফি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ।
মেম্বারশিপ খরচঃ তিন ধরনের মেম্বারশিপ রয়েছে ফ্রিল্যান্স ইন্ডিয়ার।
প্রিমিয়াম প্লাস মেম্বারশিপের খরচ বার্ষিক ২০০০ টাকা।
প্রিমিয়াম মেম্বারশিপের জন্য দিতে হবে বছরে ১৬০০টাকা।
রয়েছে ফ্রি মেম্বারশিপ। তবে মেম্বারশিপের ধরনের ওপর নির্ভর করে কাজ পাওয়ার সুযোগ।
অন কন্ট্র্যাক্ট (On Contract)
ফ্রিল্যান্স কাজের অন্যতম বড় অসুবিধা ফ্রিল্যান্সারারের সঙ্গে কোনও চুক্তিপত্র সই হয় না নিয়োগকারী সংস্থার। এর ফলে প্রায়শই নানা সমস্যায় পড়তে হয় ফ্রিল্যান্সারকে, টাকা না পাওয়া, দেরিতে টাকা পাওয়া বা কাজের শর্ত নিয়ে মতানৈক্য।
এই সমস্যার সমাধানে অন কন্ট্র্যাক্ট রেখেছে অনলাইন ই-কন্ট্র্যাক্ট সই করার ব্যবস্থা। এই চুক্তিপত্রে মাধ্যমে নিশ্চিত হয় সময় মতো টাকা পাওয়া ও কাজের নির্দিষ্ট শর্ত।
খুব দ্রুত যে সব প্রজেক্টে কর্মী প্রয়োজন, সেই প্রজেক্টে কাজের সুযোগ পাওয়া যায় এই ওয়েবসাইটে।
খরচঃ ফ্রিল্যান্সারদের থেকে কোনওরকম টাকা নেয় না অন কন্ট্র্যাক্ট, বরং নিয়োগকারী সংস্থার জন্য রয়েছে সাবস্ক্রিপশন ফি।
ফ্রিল্যান্সার (Freelancer)
ভারতের ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলির মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা ফ্রিল্যান্সার।
পৃথিবীজুড়ে অসম্ভব জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং জব সাইট আপওয়ার্কের (নীচে দেখুন) মডেলে তৈরি এই ওয়েবসাইটে রয়েছে পছন্দ মতো প্রজেক্টে বিড করার সুযোগ। অর্থাত্ কোনও প্রজেক্টে কাজ করতে চাইলে, কাজের সম্ভাব্য মূল্য ও সময় সহ আপনাকে আবেদন করতে হবে সেই নির্দিষ্ট প্রজেক্টে, যা সরাসরি পৌঁছে যাবে নিয়োগকারী সংস্থার কাছে।
অবশ্য ফ্রি প্রোফাইলে খুবই কম সংখ্যক কাজেই বিড করতে পারবেন আপনি। টাকা দিয়ে প্রোফাইল খুললে এক মাসে অনেক কাজেই আবেদনের সুযোগ মিলবে। এই ওয়েবসাইটে রয়েছে ডেস্কটপ ট্র্যাকার অ্যাপ, যার মাধ্যমে আপনি একটি প্রজেক্টে কতক্ষণ কাজ করেছেন সেই হিসেব রাখা সম্ভব। প্রতিঘন্টা হিসেবে নিয়োগ হলে এই হিসেবের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে আপনার প্রাপ্য টাকা।
খরচঃমোট টাকার ২০ শতাংশ নেয় ফ্রিল্যান্সার। প্রেফারড্ ফ্রিল্যান্সার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে নেয় ১৫ শতাংশ।
ইলমোসিস স্টুডিও (Ilmosys Studio)
শুধুমাত্র ডিজাইনার, ডেভেলপার বা ডিজিটাল কাজে দক্ষ কর্মীদের জন্য তৈরি ইলমোসিস স্টুডিও। এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটেরমাধ্যমে আপনি খুব সহজেই খুঁজে পেতে পারেন এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের ফ্রিল্যান্সিং কাজ।
ভারতে ডিজিটাল দুনিয়ায় ফ্রিল্যান্স কেরিয়ার শুরু করতে চাইলে ইলমোসিস আপনার আদর্শ পছন্দ। এই ওয়েবসাইটে খুব স্পষ্টভাষায় দেওয়া আছে নির্দিষ্ট গাইডলাইন আর সব থেকে সুবিধার বিষয়, এখানে আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন একটি প্রজেক্টে আপনি মোট কতবার সংশোধন করতে রাজি।
ডিজাইনের বা ডেভেলপিংয়ের কাজে অনেক সময়েই বারবার পরিবর্তনের অনুরোধ আসতে থাকে, যার ফলে নষ্ট হয় সময় ও শ্রম। এই সমস্যা মেটাতেই ইলমোসিস স্টুডিও রেখেছে এই সুযোগ।
এছাড়াও কোনওরকম মতানৈক্য তৈরি হলে খুবই দক্ষ হাতে সেই সমস্যার সমাধান করে এই ওয়েবসাইটের ভারপ্রাপ্ত টিম।
খরচঃ এই জবসাইটের মাধ্যমে পাওয়া প্রতিটি কাজের পারিশ্রমিকের ২০ শতাংশ দিতে হবে এই ওয়েবসাইটকে।
দ্য ফ্লেক্সিপোর্ট (The Flexiport)
অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং সাইটেরথেকে খানিক অন্য রকম ভাবে কাজ করে ফ্লেক্সিপোর্ট, এবং অপেক্ষাকৃত নতুন।
ফ্লেক্সিপোর্ট কাজ করে আউটসোর্সিং এজেন্সি হিসেবে, যোগাযোগ করিয়ে দেয় ফ্রিল্যান্সার আর কোম্পানির মধ্যে।
এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং কাজ সংক্রান্ত নানা তথ্য ও ভারতের ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট সম্পর্কে জানতে পড়ুন ফ্লেক্সিপোর্টের ব্লগ।
সম্পূর্ণ প্রজেক্টটিকে গুছিয়ে রাখার সুবিধাও পাওয়া যাবে দ্য ফ্রেক্সিপোর্টে। এর ফলে কাজের ফিডব্যাক পাওয়া এবং কাজ বোঝা সহজ হয়ে যায় অনেকটাই।
মেম্বারশিপ খরচঃ প্রিমিয়াম মেম্বারশিপের খরচ ৪০০ টাকা প্রতি তিন মাস, রয়েছে ফ্রি মেম্বারশিপও। এছাড়াও কোনও নির্দিষ্ট জব পোস্টিং পছন্দ হলে কিনে নেওয়া যায় সেই চাকরির যোগাযোগ নম্বর, ইমেল অ্যাড্রেস ইত্যাদি।
ড্রিম স্টার্টস্ (Dream Starts)
শুধুমাত্র স্টার্টআপ সংস্থাদের সঙ্গে কাজ করে এই ফ্রিল্যান্সিং সাইট । পূর্ণ সময়ের কর্মী নিয়োগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়না স্টার্টআপদের পক্ষে, কাজের জন্য মূলতঃ ফ্রিল্যান্সারদের ওপরই নির্ভর করে এই সমস্ত সংস্থা। ড্রিম স্টার্টসে খোঁজ মেলে সেই সব কাজের।
অনেক সময়েই সাধারণ অন্যান্য কাজের থেকে বেশ অন্যরকম হয় স্টার্টআপদের কাজ, থাকে উন্নতি ও সৃজনীশক্তি প্রকাশের সুযোগ। কাজ মেলে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতেও। ফলে একটু অন্য ধরনের কাজের খোঁজে থাকলে ড্রিম স্টার্টই হতে পারে আপনার ঠিকানা।
খরচঃ যে কেউ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন এই ফ্রিল্যান্সিং জব সাইট।
ট্রুল্যান্সার (Truelancer)
আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও পরিষেবা ইত্যাদির খতিয়ান দিয়ে আপনি সরাসরি পোস্ট করতে পারেন এই ফ্রিল্যান্স সাইটে। কোনও সংস্থা তাদের প্রয়োজন মতো যোগাযোগ করতে পারবে আপনাকে।
আপনার মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে নিতে পারেন ট্রুল্যান্সার অ্যাপও, তাহলে রাস্তাঘাট যেকোনও জায়গা থেকে সহজেই দেখতে পারবেন নতুন পোস্ট হওয়া ফ্রিল্যান্সিং জব। ভারতের ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা ট্রুল্যান্সার।
খরচঃ চার ধরনের মেম্বারশিপ রয়েছে ট্রুল্যান্সারের। ফ্রি, বেসিক, প্রো এবং প্লাস। মেম্বারশিপের ধরনের ওপর নির্ভর করে পারিশ্রমিকের ৮ থেকে ১০ শতাংশ রাখে ট্রুল্যান্সার।
আরো পড়ুন: ৭টি ব্যবসার আইডিয়া যা আপনি শুরু করতে পারবেন আপনার বাড়ির ছাদে
ডিজাইন হিল (Design Hill)
নির্দিষ্টভাবে ডিজাইনারদের জন্য তৈরি ফ্রিল্যান্সিং সাইট ডিজাইন হিল। ভারতের এই ওয়েবসাইট সারা পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দেয় ফ্রিল্যান্সারদের।
ডিজাইন হিলে রয়েছে অনলাইন ডিজাইন স্টোর, আপনি আপনার তৈরি টেমপ্লেট সরাসরি পোস্ট করতে পারেন এই স্টোরে। ক্রেতা সেখান থেকে কিনে নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করিয়ে নিতে পারেন সহজেই।
এছাড়া রয়েছে রিয়্যাল টাইম ফিডব্যাক ও রেটিং সিস্টেম। এই ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটের একটি ২৪x৭ কাস্টমার সাপোর্ট পরিষেবা রয়েছে, ফলে কোনও রকম সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গেই কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া সম্ভব।
খরচঃ ডিজাইন হিল ডিজাইনারদের থেকে কোনও রকম টাকা নেয় না।
ভারতের অন্যতম সেরা ১০ টি ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটের খোঁজ দিলাম আমরা, ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক ওয়েবসাইট।
উপরের বেশিরভাগ ওয়েবসাইটেরই রয়েছে সিকিওরড পেমেন্ট অপশন, অর্থাত্ শর্ত অনুযায়ী ঠিক মতো কাজ করলে সময় মতো পারিশ্রমিক দিতে বাধ্য নিয়োগকারী সংস্থা, দায়িত্ব নেবে সংশ্লিষ্ট সাইট।
তবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য শুধুমাত্র ভারতীয় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম ওপরই নির্ভর করার দরকার নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনও কোনায় বসেই কাজ করা সম্ভব যে কোনও কোম্পানিতে। প্রয়োজন উপযুক্ত যোগ্যতা ও দক্ষতা।
ভারতের বাইরে থেকে কাজ করে এরকম বহু ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটেই তাই আবেদন করতে পারেন ভারতীয় নাগরিকরা। ভারতীয় সংস্থার পাশাপাশি কাজ পাওয়া যাবে বিভিন্ন বিদেশী সংস্থাতেও।
নিচে রইল কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং সাইটেরতালিকা ও বিবরণ।
ভারতীয়দের জন্য কয়েকটি গ্লোবাল ফ্রিল্যান্সিং জব সাইট
আপওয়ার্ক (Upwork)
পৃথিবীজুড়ে সবথকে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোর মধ্যে একটি আপওয়ার্ক। পাওয়া যায় সবথেকে বেশি কাজের খোঁজ।
বেশিরভাগ কাজই পৃথিবীর যেকোনও জায়গায় ঘরে বসে করা যায়। রয়েছে মোবাইল ও ডেস্কটপ অ্যাপ। লেখালেখি, অনুবাদ, অনুলেখন, কোডিং, ডিজাইন কাজ রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কাজেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এই ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে কাজের পরে পূর্বনির্ধারিত পারিশ্রমিক পাওয়ার নিশ্চয়তা।
টাকার লেনদেনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আপওয়ার্কের। এছাড়া রয়েছে টাইম ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা। একটি প্রজেক্টে আপনি ঠিক কতক্ষণ কাজ করছেন, জানতে পারবে ক্লায়েন্ট, ঘন্টা হিসেবে কাজের চুক্তি হলে এই ট্র্যাকিংয়ের ভিত্তিতেই মিলবে পারিশ্রমিক।
খরচঃ পারিশ্রমিকের ২০ শতাংশ পরিষেবা মূল্য হিসেবে নেয় আপওয়ার্ক। তবে একজন নিয়োগকারীর থেকে আপনি যদি ৫০০ মার্কিন ডলারের বেশি পান, সেক্ষেত্রে পরিষেবা মূল্য হয় ১০ শতাংশ।
প্রোব্লগার জবস (ProBlogger Jobs)
অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোর থেকে খানিকটা আলাদা প্রোব্লগার জবস। অনেকটা অনলাইন জব পোর্টালের মত কাজ করে প্রোব্লগার জবস।
লেখালেখির কাজের সঙ্গে যুক্ত ফ্লিল্যান্সারদের জন্য রয়েছে প্রচুর কাজের সুযোগ। এখানে গ্রাহকের সঙ্গে ই-মেলের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করে আপনি পাঠিয়ে দিতে পারে আপনার বায়োডেটা।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল এই ফ্রিল্যান্সিং জবসাইটের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন বিশ্বের নামজাদা সংস্থার সঙ্গে কাজের সুযোগ, থাকবে যথোপযুক্ত পারিশ্রমিকও।
শক্তিশালী লেখনী, স্বচ্ছ ধারনা ও প্রয়োজনীয় সৃজনীশক্তি থাকলে নিয়মিত কাজ পাওয়া সম্ভব এই ওয়েবসাইট থেকে। ব্লগ লিখে আয় করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে এই ওয়েবসাইটে।
খরচঃ ফ্রিল্যান্সারদের পারিশ্রমিক থেকে কোনও রকম টাকা নেয়না প্রোব্লগার জবস। তবে এই সাইটে চাকরি পোস্ট করার জন্য সংস্থাদের দিতে হয় মাসিক ৭০ মার্কিন ডলার।
গুরু (Guru)
অন্ততঃপক্ষে গত ২০ বছর ধরে ফ্রিল্যান্স মার্কেটে কাজ করছে গুরু, ফলে এর বিশ্বাসযোগ্যতা সহজেই অনুমেয়। এই ফ্রিল্যান্সিং জবসাইটে নথিভুক্ত ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৩ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং, সেলস্, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, আইন সংক্রান্ত কাজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ পাওয়া সম্ভব বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
মেম্বারশিপ খরচঃ পরিষেবা মূল্য হিসেবে পারিশ্রমিকের ৪.৯৫ শতাংশ থেকে ৮.৯৫ শতাংশ নেয় গুরু, নির্ভর করছে আপনার মেম্বারশিপের ধরনের ওপর।
বিনামূল্যেই আপনি পেতে পারেন মেম্বারশিপ তবে সেক্ষেত্রে মাসে ১০টির বেশি বিড করতে পারবেন না। এর থেকে বেশি বিড করতে রয়েছে নানা রকমের মেম্বারশিপ। খরচ মাসিক ৮.৯৫ মার্কিন ডলার থেকে ৩৯.৯৫ মার্কিন ডলার।
শুধুমাত্র বেশি বিডই নয়, মেম্বারশিপের ওপরই নির্ভর করছে আপনাকে পারিশ্রমিকের কত শতাংশ দিতে হবে গুরুকে, পাওয়া যাবে সার্চ বুস্টের মতো সুবিধাও। এ বিষয়ে বিশদ জানতে দেখুন গুরু ।
ক্রেগলিস্ট (Craigslist)
ক্রেগলিস্টের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট শহর বা এলাকাতে কাজ খোঁজা সম্ভব। এই ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটের মাধ্যমে আপনি সহজেই খুঁজে পেতে পারেন আপনার পছন্দমতো শহরে ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগ।
অনেক চাকরির ক্ষেত্রেই ঘরে বসে কাজ করার সুবিধা রয়েছে। অর্থাত্ আপনি বাড়িতে বসেই যে কোনও দেশের যে কোনও শহরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে কাজ করতে পারেন।
খরচঃ ক্রেগলিস্টের কোনও পরিষেবা মূল্য নেই।
হাবস্টাফ ট্যালেন্ট (Hubstaff Talent)
এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটেরনেটওয়ার্কে রয়েছে কয়েক হাজার সফট্ওয়্যার কোম্পানি, এজেন্সি ও ই-কমার্স সংস্থা। বিভিন্ন কাজের জন্য নিয়মিত ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ করে এই সব সংস্থা।
এখানে কোনও বিডিংয়ের ব্যবস্থা নেই, ফলে অনেকটাই সময় বেচে যায়। এখানে গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় এবং পারিশ্রমিকও মেলে সরাসরি।
খরচঃ ফ্রিল্যান্সারদের থেকে কোনও রকম টাকা নেয় না এই ওয়েবসাইট।
ক্রপ (Krop)
বেসরকারি শিল্পক্ষেত্রের নিউজলেটার হিসেবে শুরু হয়েছিল ক্রপ। বিলি হত সেরা ডিজাইনারদের মধ্যে।
বর্তমানে পরিণত হয়েছে একটি অনলাইন জব সাইটে যেখানে প্রতিভাবান কর্মীরা নিজেদের পোর্টফোলিও পোস্ট করতে পারেন বা সরাসরি আবেদন করতে পারেন কোনও কাজের জন্য। পৃথিবীর সব থেকে বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে পাওয়া যেতে পারে কাজের সুযোগ।
মেম্বারশিপ খরচঃ মাসিক ৮ মার্কিন ডলারের বিনিময় আপনার কাস্টমাইসড প্রোফাইল খুলতে পারেন এই ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মে।
আরো পড়ুন: দেশে বিদেশে আপনার পণ্য বিক্রি করতে চান? সাহায্য করবে অ্যামাজন লঞ্চপ্যাড
বিহেন্স (Behance)
গ্রাফিক ডিজাইনারদের সেরা ঠিকানা বিহেন্স। আপনি অনলাইনে আপনার কাজ আপলোড করতে পারেন এই ওয়েবসাইটে, যা দেখে আপনাকে কাজ দিতে পারে কোনও সংস্থা।
পাশাপাশি বিহেন্স আপনার কাজ ছড়িয়ে দেবে বিভিন্ন অনলাইন গ্যালারিতে, বাড়বে পরিচিতি। এবং সবচেয়ে বড় কথা বিহেন্স অ্যাডোব (Adobe)-এর একটি অংশ।
মেম্বারশিপ খরচঃ এখানে প্রোফাইল খোলার কোনও খরচ নেই।
ওয়ার্কিং নোম্যাডস্ (Working Nomads)
ভ্রমণপিপাসুদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি ওয়ার্কিং নোম্যাডস্। নামেই বোঝা যায় এই ফ্রিল্যান্সিং সাইট তাদের জন্য যাদের পায়ের তলায় সর্ষে।
বিভিন্ন ধরনের কাজ পাওয়া যায় যা বিশ্বের যেকোনও জায়গায় বসে করা সম্ভব। তাই আপনি যদি ভারতে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে ইনকাম চান তাহলে ওয়ার্কিং নোম্যাডস্ খুবই কার্যকরী। সমুদ্রের ধারে বা পাহাড়ের কোলে কাজ করতে পারেন যেকোনও জায়গা থেকে।
খরচঃ নিয়োগকারী সংস্থাদের থেকে মোটা টাকা পরিষেবা মূল্য নেয় এই ফ্রিল্যান্সিং জব সাইট, আর ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কোনও পরিষেবা মূল্য নেই।
ড্রিবল্ (Dribble)
ফ্রিল্যান্স ডিজাইনারদের জন্য আরও একটি কার্যকরী ওয়েবসাইট ড্রিবল্। এখানেও আপনি আপলোড করতে পারেন আপনার তৈরি ডিজাইন যা পৌঁছে যাবে গোটা পৃথিবীর গ্রাহকের কাছে। ফলে উদ্ভাবনী ও সৃজনশক্তি থাকলে কাজের অভাব হবে না।
এটি ডিজাইনারদের একটি অনলাইন কমিউনিটির মতো কাজ করে, যোগাযোগ তৈরি হয় বিশ্বে বিভিন্ন ডিজাইনারের সঙ্গে।
খরচঃ আপনি কোন ধরনের মেম্বারশিপ নিতে চান তার ওপর নির্ভর করছে খরচ, এবং এই খরচ নিয়মিত বদলায়।
পিপল পার আওয়ার (PeoplePerHour)
পিপল্ পার আওয়ার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট। মূলতঃ ঘন্টা প্রতি পারিশ্রমিকের হিসেবে কাজকে গুরুত্ব দেয় এই ওয়েবসাইট।
সময়ের হিসেব নিয়ে যাতে কোনও রকম সমস্যায় পড়তে না হয় সে জন্য রয়েছে টাইম ট্র্যাকার। আপনি একটি প্রজেক্টে কতক্ষণ কাজ করলেন তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব রাখবে এই সাইট।
খরচঃ ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ, আপনার কাজের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে পরিষেবা মূল্য। খরচ সম্পর্কে আরও জানতে এখানে দেখুন।
র্যাট রেস রেবেলিয়ন (Rat Race Rebellion)
এই ফ্রিল্যান্সিং জবসাইটের প্রতিষ্ঠাতারা নিজেরা দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিল্যান্স মার্কেটের সঙ্গে যুক্ত ফলে ফ্রিল্যান্সার এবং গ্রাহক দুতরফের চাহিদাই বুঝতে পারে সহজে।
বেশিরভাগ কাজই অনলাইন এবং করা যায় পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে। ফলে একজায়গায় আটকে থাকার কোনও দরকার নেই, কাজ করতে করতেই ঘুরে ফেলুন নানা জায়গা।
খরচঃ এই ওয়েবসাইটের জব লিস্টিং শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপনের মতো, লগইন করে সরাসরি অনলাইনেই আবেদন করেত পারেন।
ফিভার (Fiverr)
ভারতীয়দের জন্য প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে এই ফ্রিল্যান্স জবসাইটে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া যাবে এখানে।
টাকা লেনদেনের মধ্যস্থতা করে ফিভার, ফলে পারিশ্রমিক পাওয়া নিশ্চিত। ডিজিটাল পরিষেবার ক্ষেত্রে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট।
খরচঃ পারিশ্রমিকের ২০ শতাংশ নেয় ফিভার।
এসইওক্লার্ক (SEOClerk)
আজকের দুনিয়ায় যেহেতু প্রায় সব তথ্যের জন্যই আমরা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল, তাই সব সংস্থার জন্যই জরুরি যাতে গুগল্ সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজে তাদের সংস্থার ওয়েবপেজ প্রথম কয়েক পাতার মধ্যেই থাকে, আর তার জন্য প্রয়োজন এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
এসইও ভারতের ফ্রিল্যান্সারদের এক বিরাট কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। এই ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটে আপনি আপনার দক্ষতা ও পারিশ্রমিক জানিয়ে পোস্ট করতে পারেন, নিয়োগকারী সংস্থাই আপনাকে খুঁজে নিয়ে যোগাযোগ করবে। আপনার কাজের হিসেব রাখবে ওয়েবসাইটই।
খরচঃ পারিশ্রমিকের ২০ শতাংশ রাখবে এসইও ক্লার্ক।
আউটসোর্সলি (Outsourcely)
ঘরে বসে কাজ হলেও দীর্ঘমেয়াদি কাজ চায় যেকোনও ফ্রিল্যান্সারই, এতে বারবার নতুন করে প্রজেক্ট খুঁজতে হয় না, একই সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত কাজ করার ফলে সড়গড় হয়ে যাওয়া যায় চাহিদা ও পছন্দ সম্পর্কে। এই বিষয়েই সাহায্য করে আউটসোর্সলি।
এর মাধ্যমে ফুল টাইম বা পার্ট টাইম দুধরেন কাজই পাওয়া সম্ভব। রিয়েল এস্টেট, সফটওয়্যার, ডিজিটাল মার্কেটিং সহ নানা কাজ পাওয়া যায় এখানে।
ঘন্টা প্রতি ভাল হারে পারিশ্রমিক দেয় এই ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম। ২০১৪ সাল থেকে ফ্রিল্যান্স মার্কেটে কাজ করছে আউটসো্র্সলি, ইতিমধ্যে ১৮০টি দেশে ৩ লক্ষেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার এই ওয়েবসাইটের মেম্বার।
খরচঃ আপনার পারিশ্রমিকের পুরোটাই পাবেন আপনি, আউটসোর্সলি কোনও পরিষেবা মূল্য রাখবে না।
পরিশেষে
এই তালিকার বাইরেও রয়েছে একাধিক ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেখানে কাজের সুযোগ পাওয়া সম্ভব। আমরা এমন কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইটেরতালিকা দিলাম যেগুলো ভারত থেকে কাজ করে বা ভারতীয় নাগরিকদের কাজের সুযোগ দেয়।
যে কোনও অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতেই ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করা সম্ভব এই অনলাইন জব সাইট গুলোতে, রয়েছে পারিশ্রমিক পাওয়া নিশ্চয়তা। এর মধ্যে বেশিরভাই কোনরকম বিনিয়োগ ছাড়াই আয়ের সুযোগ করে দেয়। ভারতে বসে বিশ্বজোড়া ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে কাজ শুরু করতে সাহায্য করবে এই তালিকা।
অনলাইনে ইনকাম করতে হলে আপনার পছন্দমতো সাইটটি বেছে নিয়ে প্রোফাইল খুলে কাজ শুরু করে দিতে পারেন আজই।
আপনার যদি অন্য কোনও ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটের কথা জানা থাকে, কমেন্ট বক্সে জানান আমাদের।
0 মন্তব্যসমূহ
https://internationalnewstar.blogspot.com/
Whatsapp-74782 01605
https://www.facebook.com/Internationalnewstar.official