আবার পৃথিবী হাসবে কবি ঋক তান

আবার পৃথিবী হাসবে
কবি ঋক তান


এই মাত্র খোকাকে একখানি চিঠি লিখলাম
অহেতুক ক-টা কথা!
কথাগুলো লিখতে যদিও 
মনের ভিতর কেমন জ্বালা ধরে ছিলো
অনুভূতির নরম শরীর ঘিরে
 নামছিল অনিয়ন্ত্রিত আড়ষ্টতা 
অনাহুত হতচ্ছাড়া বিবেক 
অজানা তেপান্তরে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিল।

অনেকদিন ধরে অভ্যেসটাই নষ্ট হয়ে গেছে চিঠি লেখার অনভ‍্যাসে

আপন মর্জিতে ,ভালো মন্দ ,উচিৎ অনুচিত ভাবনার অবকাশে
উদাস বিষণ্নতা ঘিরে থাকা এ মন দিচ্ছিল চেতনার খোঁচা
তবুও লিখলাম ক-টা কথা ,বড্ড কষ্ট করে
শব্দরা হারিয়ে যাচ্ছে চুপচাপ 
থাকার অভ্যাসে ।
লিখলাম -"খোকা"তুমি এখন বিদেশে 
কতদিন আসনি তুমি এদেশে
আজ কতদিন তালাবন্দি আমি পৃথিবীর বুকে
করোনার মরণ ব্যাধির আতঙ্কে ,
বয়েসটা অনেক হলো ঘাত প্রতিঘাতে অনেকটা থমকে যায় মাঝপথে ,
খোকা তোমার মা রয়েছে এখন ঠাকুর ঘরে 
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আলপনার শিল্পিত কুশলতায় 
আজ বৃস্পতিবার লক্ষীর আরাধনায়
তোমার মা ভীষণ কান্না করছে ঠাকুরের চরণে তোমার ভালোর জন্যই ,তোমার মঙ্গল কামনায় ,প্রার্থনা নীরব ভাবনায়।
চারিদিকে করোনার ফাঁদে নিঃশব্দে শহরটা আজ বড়ো একাকী ,
সময় আজ স্তব্ধ ,তবুও চাঁদ রয়েছে আপন মনে বসন্তের পলাশের ফাঁকে 
খোলা বাতাসে ভেসে আসছে পাশের ছোট্ট বাগান থেকে ফুলের স্নিগ্ধ গন্ধ ,
আমি বড্ড বিচলিত হয়ে উঠেছি তোমার জন্য
চেনা মানুষ গুলো আজ চেনা গন্ডির বৃত্তের মধ্যে থেকেও কতো যেন অচেনা অন্য।
  সাময়িক অচেনার মতো আজ তারা অন্ধ ।
খোকা কতদিন কোনো সংবাদ নেই তোমার 
তবুও তো ঘুমের মধ্যে সময়ে 
অসময়ে গভীর ভালোবাসা ছুঁয়ে যায়।
তুমি বলেছিলে উড়ানে চাপার আগে অনেক দামি উপহার পাঠিয়ে দেবো তোমাদের জন্য।
তুমি সেই গেলে ,প্রথম কয়েক মাস ,বছর তোমার পাঠানো 
চিঠি আসতো।
আমরা দুজনে কতবার যে তোমার চিঠি খানি পড়তাম 
বাড়ির চাকর পরান দা মুখ টিপে হাসতো।
এখন আর পরবাস থেকে আসা চিঠি কতদিন বন্ধ
সারাদিন তোমার মা বসে থাকে একটা খামের আসায় 
সন্ধ্যা নামে আবার ভোর হয় 
আবার কাক ভেজা বৃষ্টিতে 
রতন মুদি ছুটে যায় তার নতুন চিঠির পোস্টাল গন্ধে 
খোকা আমি চাই না আজ আর নুতন কিছু ,দামি উপহার 
আমি চাই এমন একটা প্রভাত
এই পৃথিবীর বুকে যুদ্ধের ভাইরাস আর না বাজে ।
বাড়ির তোমার সব বই ,টেবিল চেয়ার ,পুরানো কম্পিউটার ,যেগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো
সব একটু একটু করে গুছিয়ে রাখলাম প্রতিকূল ভগ্নতায়
নতুন করে সব দেওয়ালে দেরাজে চেনা জিনিস গুলো 
অজস্রতায়।
স্মৃতি -বিস্মৃতির হালকা রঙ
মেখে মনকে নাড়া দিয়ে যায়!
আজ করোনার আতঙ্কে আমাদের পাড়াটা এখন হাহাকার ,
শেষে লিখি ,খোকা আমার কাশিটা বেড়েছে
গোলায় ব্যাথা অনুভব হচ্ছে
হালকা জ্বর জ্বর ভাব
তোমাকে দিলাম চিঠির সাথেএকখানি পুরাতন ছবি,
আর তো নেই কিছু পাঠাবার ।
এখন অফুরন্ত অন্ধকার নিঃসঙ্গতা ও শূন্যতা চারিদিকে না না দশ দিকে 
চিঠিটা এখন খামে মুড়ে যাবো পরান দার বাড়ি কাল ডাকবাস্কে ফেলে আসবে ,
আবার পৃথিবী হাসবে ,নতুন করে আবার কবিরা লিখবে।
হয়তো আমি বা কেহ এই যুদ্ধে নিভে যাবে 
চিঠির উত্তর দিও
সাবধানে থেকো ,ভালো থেকো আশির্বাদ করি মনে মনে --
যদি সময় না পাও চিঠি দিতে 
সেদিনের একটা নতুন কোভিড উনিশ মুক্ত সকালের অকৃত্রিম ভালোবাসার ফুল পাঠিও এস এম এস করে মুঠোফোনে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ